আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিকল্পিত উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। দেশের নাগরিকরাই ভোটের মালিক৷ তারা যদি উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা চান তাহলে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে হবে। রোববার (৬ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে এদেশের মানুষ এ কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে করে আরও বলেন, আপনাদের পদচারণায় গণভবন প্রাঙ্গণ আজ ধন্য। অনেকদিন পর আপনাদের সঙ্গে কথা বলার একটা সুযোগ হলো। তবে দেশের উন্নয়নের কথা জনগণের তাছে তুলে ধরুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কিভাবে দেশকে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্যের হারে নামিয়ে আনা হয়েছে; এটা আগে সম্ভব হয়নি কেন? সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশ পরিচালানো করায় মানুষের আর্থিক অবস্থা ক্রমেই ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে৷ উচ্চ সুদের ঋণ বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারে নি৷ যতটুকু হয়েছে তা আওয়ামী লীগের সময়েই৷ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বলেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দেখতে চাইলে নৌকার বিকল্প নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরে একটা চক্রান্ত শুরু হয়। সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পচাত্তর পরবর্তী সময়ে আমাকে দেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন ১২টি আর জরুরি সরকার দিয়েছিল ৬টি মামলা। আমি বলেছিলাম, প্রতিটি মামলার তদন্ত করে আমাকে জানাতে হবে। আমি দুর্নীতি করতে এখানে আসিনি। আমি মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য না। আমি ত্যাগ করতে এসেছি, ভোগ করতে না।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। মাথাপিছু আয় যেখানে খালেদা জিয়ার আমলে ৩৪৩ ডলারের মতো ছিল, আমরা সেটি দুই হাজার ৭৩৯ ডলারে উন্নীত করেছি। এই যেই ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন- এগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। আর কারও দ্বারা এগুলো হয়নি, কোনো সরকার এগুলো করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে এদেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে। তিনি বলেন, জনগণই ভোটের মালিক, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পাবে এদেশের মানুষ।
বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছিলেন। ৩-৪ শতাংশও ভোট পড়েনি। কিন্তু তিনি ভোট চুরি করে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের মানুষ এই ভোটচুরি মেনে নেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ভোট চুরি করলে মেনে নেয় না। কাজেই ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
এরপর ১২ জুন যেই নির্বাচন হয়, সেটিতে আমরা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। সভায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কারণে আওয়ামী লীগ হেরেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় এবং দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্তের কারণে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে বলে সভায় জানান সরকারপ্রধান।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে ‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শুরু হয়। এতে দলটির তৃণমূলের প্রায় তিন হাজার নেতা যোগ দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।